• শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

স্কুলছাত্রের তৈরি উড়োজাহাজ উড়াল দিলো আকাশে

Reporter Name / ১৪৫ Time View
Update : বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

ইউটিউব দেখে উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল ছাসিয়ার ছড়া হাবিবপুর এলাকার শামিম রানা (১৫)। রিমোট নিয়ন্ত্রিত উড়োজাহাজটিকে প্রায় ১৫ মিনিট আকাশে উড়িয়েছে এই স্কুলছাত্র। এ ঘটনার পর থেকে উড়োজাহাজের সঙ্গে ওই কিশোরকে দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ।

শামিম রানা ফুলবাড়ীর জসিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা সহিদুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক। মা সুমি বেগম গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়।

শামিম রানা জানায়, ‘অচিন পাখি’ নামে উড়োজাহাজটির ওজন ১ কেজি ৩ গ্রাম। দৈর্ঘ্য ৫৬ ইঞ্চি। উচ্চতা ও প্রস্থে সাড়ে ৮ ইঞ্চি। ছয়টি চাকা বিমানে যুক্ত করা হয়। উড়োজাহাজটিতে ২২শ কেভি দুইটি ‘ব্রাশলেস ডিসি মোটর’ ব্যবহার করা হয়েছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনি প্রথমবার ককশিট দিয়ে উড়োজাহাজেরে আদল তৈরি করেন। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত উড়োজাহাজটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি-ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

শামিমের পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, শৈশব থেকেই উড়োজাহাজ বানানোর আগ্রহ ছিল শামিম রানার। শুরুর দিকে কলার গাছের ছাল ও কাগজ দিয়ে তৈরি করেছে। পরে ইউটিউব দেখে পড়ালেখার পাশাপাশি বিমান তৈরির প্রস্তুতি নেয়। এজন্য সে তার বাবা-মায়ের কাছ টাকা নেওয়ার বায়না করত। খাতা কলম কেনার টাকা খরচ না করে জমিয়ে রাখত। সেখান থেকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজ তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ অনলাইনে কিনে আনে। ৯ মাসের চেষ্টায় একটি ক্ষুদ্র উড়োজাহাজ তৈরি করতে সক্ষম হয় সে।

উড়োজাহাজ উড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য ফুলবাড়ী থেকে আসা রফিকুল ইসলাম ও আলী হোসেন জানান, অসাধারণ প্রতিভা ছেলেটির। অল্প বয়সে এ অঞ্চলে প্রথম উড়োজাহাজ তৈরি করেছে সে। আমরা ভাবতে পারিনি এটি আকাশে উড়বে। বাস্তবে দেখার জন্য এসেছি।

শামিম রানার বলেন, ছোট বেলায় আমার মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ কীভাবে গেল, তা দেখে চিন্তা করেছি। ওই দিন থেকে আমি নিজের হাতে উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে ওড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি। তাই কলার ছাল ও কাগজ দিয়ে প্রথমে তৈরি করা শুরু করেছি। এখন উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়াতে পেরে খুবই আনন্দিত আমি। ভবিষ্যতে আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।

শামিম রানা মা সুমি বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি কাগজ দিয়ে উড়োজাহাজ তৈরি করতো। অযথা সময় নষ্ট যাতে না করে সে জন্য আমি অনেক বাধা দিতাম। কিন্তু সে বাধা না মেনে এগুলো করত। তার বায়না শুনে বাধ্য হয়ে কষ্ট করে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে উড়োজাহাজ তৈরির খুচরা যন্ত্রাংশ অনলাইনে কিনেছে। তার উড়োজাহাজ দেখার জন্য অনেক মানুষ আসে। আমার ছেলেকে সহযোগিতা করা হলে তার বড় স্বপ্ন পূরণ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর-রশিদ বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহল ছাসিয়ার ছড়া হাবিবপুর এলাকার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শামিম রানা উড়োজাহাজ তৈরি করেছে। তার এই অসাধারণ কাজে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। আশা করি, সে এমন আরও অনেক কিছু তৈরি করবে।

ফুলবাড়ী জসিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, আমার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শামিম রানা লেখাপড়ার পাশাপাশি ককশিট দিয়ে ব্যাটারিচালিত উড়োজাহাজ তৈরি করেছে। সে বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার্থী। তার প্রতিভা বিকাশে বিদ্যালয় থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category