• সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

বিয়ানীবাজারে বান্ধবীর বাড়ি থেকে নিখোঁজের সাড়ে তিন মাসেও মেলেনি কলেজছাত্রী তামান্নার সন্ধান

সামিয়ান হাসান / ২৭ Time View
Update : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় একই গ্রামে বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে হাবিবা জান্নাত তামান্না নামের এক তরুণী নিখোঁজের প্রায় সাড়ে তিন মাসেও কোনো সন্ধান মেলেনি। তাকে গুম করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন স্বজনরা। রহস্যজনক এ নিখোঁজের ঘটনাটি উপজেলার কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামে।

নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্না উপজেলা কুড়ারবাজার ইউনিয়নের উত্তর আকাখাজানা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর মৃত নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।

গত ২৬ জুন নিখোঁজ তামান্নার বান্ধবী তাছলিমা জান্নাত নামের এক প্রতিবেশী তরুণীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে বিয়ানীবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন কলেজছাত্রীর বড় বোন রাহেলা আক্তার। তার অভিযোগ, আমার বোনকে তাছলিমা জান্নাত নিজের মা ও ভাইয়ের সহযোগিতায় গুম করে লুকিয়ে রেখেছেন।

নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্নার স্বজনরা জানান, একই মাদ্রাসায় দাখিল পড়াকালীন হাবিবা জান্নাত তামান্নার সঙ্গে উত্তর আকাখাজানা গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুল বাছিতের মেয়ে তাছলিমা জান্নাতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বান্ধবীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় প্রায়ই দুজনেরই উভয় বাড়িতে যাওয়া-আসা, এমনকি একে অন্যের বাড়িতে রাতযাপনও ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

তারা আরও জানান, গত ২২ জানুয়ারি সকালে অন্যান্য দিনের মতোই তাছলিমা জান্নাতের বাড়িতে যায় হাবিবা জান্নাত তামান্না। এরপর তাছলিমার মা হাবিবার ভাই হায়াত আহমদকে মুঠোফোনে হাবিবাকে তাদের বাড়িতে কিছুদিন রাখতে চাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাতে সায় দেননি। পরে ১৪ মার্চ রাত পর্যন্ত হাবিবার সঙ্গে তার ভাই-বোনের মুঠোফোনে যোগাযোগ থাকলেও পরদিন ১৫ মার্চ থেকে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দু-এক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন হাবিবা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ে। তারা ছুটে যান তাছলিমাদের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে তাছলিমা ও তার মা, ভাই-বোন অন্য কোথাও চলে গেছেন। কিন্তু কোথায় গেছেন, কেউই জানে না।

হাবিবা জান্নাত তামান্নার বড় বোন রাহেলা আক্তার বলেন, গত ২২ জানুয়ারি সকালে তাছলিমার ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে হাবিবা আর ফেরেনি। আমার বোনকে উদ্ধারের জন্য এলাকায় নালিশ করেও লাভ হয়নি। এমনকি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে বিচারপ্রার্থী হওয়ায় গ্রামের মানুষের নানা রকম মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, থানায় আসতে চাইলে অনেকেই মামলা-মোকদ্দমায় গেলে ফেঁসে যাবে এবং অনেক টাকা-পয়সার লাগবে বলে নিরুৎসাহিত করত। উপায় না পেয়ে বোনের খোঁজ পেতে বিয়ানীবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। আমার বোনকে তাছলিমা ও তার মা-ভাই মিলে লুকিয়ে রেখেছে। তাছলিমাদের অবস্থান জানতে পারলেই আমার বোনের সন্ধান পাওয়া যাবে।

নিখোঁজের প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলেও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে রাহেলা আক্তার জানান, মা-বাবা নেই, আমরা এতিম। তার উপর আমার ভাই-বোনেরা সবাই সমাজের অন্য মানুষদের চেয়ে একটু আলাদা, সহজ-সরল প্রকৃতির। আমরা বোন তার বান্ধবী তাছলিমার বাড়িতে বসবাস করেছে, বিষয়টা আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন বোনের সন্ধান পেলাম না, তখন বাধ্য হয়েই পুলিশের কাছে গিয়েছি।

উত্তর আকাখাজানা গ্রামের বাসিন্দা সমছ উদ্দিন, আজাদ উদ্দিন ও খলিলুর রহমান বলেন, হাবিবার পরিবারের লোকজন আমাদের ঘটনাটি জানালে আমরা স্থানীয় কয়েকজন মিলে তাছলিমার চাচা জুনেল আহমদকে জানাই। তিনি কয়েকদিনের সময় নিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও এর সমাধান দিতে পারেননি। একপর্যায়ে তাছলিমার বাবা কুয়েত প্রবাসী আব্দুল বাছিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজ জানেন না বলে জানান। পরে আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেই।

তাছলিমার চাচা ও ফাঁড়িরবাজারের ব্যবসায়ী জুনেল আহমদ জানান, স্থানীয়রা তার কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ায় তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। তা ছাড়া পারিবারিক বিরোধের কারণে আব্দুল বাছিত কিংবা তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানরা বর্তমানে বাড়িতে নেই। কোথায় আছে সে খবরটিও কেউই বলতে পারছেন না।

কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, নানাভাবে চেষ্টা করেও যখন আমরা হাবিবার সন্ধান পেতে ব্যর্থ হই, তখন ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

একই এলাকার মানুষ হয়েও হাবিবার সঙ্গে সঙ্গে তাছলিমার পরিবারের লোকজনের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রবাসী আব্দুল বাছিতের পরিবারের সঙ্গে কারও খুব একটা যোগাযোগ নেই। তারা হুট করে কোথায় চলে গেছে, কেউই জানে না। আব্দুল বাছিতের আপন ভাই যেখানে জানে না বলেছে, সেখানে আমরা তো পাড়া-প্রতিবেশী।

বিয়ানীবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল আমিন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে আমরা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। অভিযুক্তদের মুঠোফোন নম্বরগুলো সংগ্রহ করেছি। অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করতে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছি। কারণ, তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলেই মূল রহস্য উন্মোচিত হবে।

বিয়ানীবাজার থানার ওসি মো. আশরাফ উজ্জামান বলেন, আমরা নিখোঁজ হাবিবা জান্নাত তামান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category