দেশে আবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন একজন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-সূত্রে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জন আক্রান্ত এবং ২ জন সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ ছড়ালেও সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এই ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ ও ধরন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে বিষয়টি অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৩ জন, একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এদিন মোট ৮৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে সরকারি ল্যাবে ১০১টি, বেসরকারি ল্যাবে ৭৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এসব পরীক্ষায় দেখা যায়, শনাক্তের হার ১.৫২ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; তবে সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
অন্যদিকে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসের দুটি ওমিক্রন ডিসিএভিআইভি-এক্সএফজি এবং এক্সএফসি-কেবিভি৩ হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম এই নতুন দুটি উপধারা শনাক্ত হয়। এর পর কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরে আইসিডিডিআর, বি পরিচালিত হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে সংক্রমণের হার বাড়তে দেখা যায়।
গত মাসে হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়, যেখানে বছরের শুরুতে এই হার ছিল প্রায় শূন্যে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়ের কিছু নেই। আইসডিডিআর,বির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখনও পরিস্থিতি গুরুতর নয়। তবে ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়াতে সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনের ভাষ্য, বর্তমান আবহাওয়ার প্রভাবে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গে আক্রান্তদের মধ্যেও করোনা শনাক্ত হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টে পরিবর্তন, যা আগের তুলনায় কম মারাত্মক হলেও দ্রুত সংক্রামক। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান করাই এখন সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।
অন্যদিকে অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশু- যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা লিভারের সমস্যা রয়েছে, তারা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য আরও বেশি সতর্কতা প্রয়োজন।
জানা গেছে, ভারতসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন ওমিক্রন সাবভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে আইএইচআর ডেস্কে স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং জোরদার করেছে। থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ভারত ও অন্যান্য উচ্চ সংক্রমিত দেশগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলসহ গণপরিবহনে মাস্ক ছাড়া চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান, প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ এবং সন্দেহভাজন রোগীর ক্ষেত্রে আইইডিসিআরের হটলাইন ০১৪০১-১৯৬২৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।